অনুভবে তুমি.....Submit By Keya Bangladesh Agricultural University Main Road, Mymensingh 2202, Bangladesh.
অাজ অাবিরের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন।অাবির রেডি হচ্ছে ওরিয়েন্টেশনে যাবে বলে।নাম না জানা কত সব বন্ধুর সাথেই না অাজ সে পরিচিত হবে।খুশি যেন বাধ মানছে না।অনুষ্ঠানে নবীন বন্ধুদের মাঝখান থেকে একজন অাগমনী শুভেচ্ছা জানালো।মেয়টি দেখতে ঠিক ঈশিতার মতো।অাবিরের মনে পড়ে গেলো পুরোনো দিনগুলো।। কত পাগলামিই না অাবির করেছে।গভীর রাতে ঘরের চালে ঢিল ছুঁড়ে জাগিয়ে তুলেছে ঈশিতাকে।শুধুমাত্র দুজন এক সাথে জেগে থাকবে বলে।।ঈশিতা প্রায়ই অাসতো অামাদের বাসায় অাম্মুর হাতের রান্না খাবে বলে।অামি ঈশিতার বাসার সামনে দিয়ে যাবার সময় সাইকেলে তিনবার বেল বাজালেই ও সব বাধা পেরিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াতো অামাকে দেখার জন্য!!কেমনে যেন ও বুঝে যেত এ অামি ছাড়া অার কেউ না।।প্রত্যেকটা পূর্ণিমা রাত কাটাতাম ওদের বাসার সামনের পুকুর পাড়ে।বন্ধুরা মিলে উচ্চস্বরে গান গাইততাম যেন ও বাসা থেকে শুনতে পায়। কিন্তু এক রাতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ঈশিতার সাথে কথা বলতে গিয়ে ধরা পড়ে যাই অামি। প্রচন্ড মার মারে ওর বাবা অামাকে।অাম্মুকে গিয়ে বলে যে ছেলে এখনি মেয়েদের পিছু নেয় সে ছেলে কোনদিন মানুষ হবে না।অাম্মুর প্রচন্ড জেদ হয়।।অাম্মু সিদ্ধান্ত নিল অামাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে।অামিও রাজি ঢাকায় চলে যাবো।।ঈশিতাও ইতোমধ্যে জেনে গেছে অামার চলে যাবার কথা।তবে চলে যাবার অাগে একবার দেখা করা দরকার। এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানালাম কাল সকাল ছয়টায় যেনো ঈশিতা জমিদারবাড়ীর মাঠে অাসে।ঐ সময়ে ঈশিতা প্রাইভেট পড়তে যায়।ভোর হবার অাগেই অামি পৌঁছে গেলাম। ঈশিতা এসেছিলো ঠিকই কিন্তু ওর বাবা ছিল সাথে।।এলাকায় কুকুরে উৎপাত খুব বেশী তাই হয়তো একলা ছাড়েনি ঈশিতাকে। বিষন্নমনে ঈশিতা বাবার কিনে দেয়া ভাপা পিঠা খেতে খেতে যাচ্ছিলো। অাড়াল থেকে তাই দেখছিলাম অামি দুচোখ ভরিয়া।।ছুঁড়ে ফেলে দেয়া ভাপা পিঠার কাগজটা অাজো রেখেছি যত্ন করিয়া। অনুষ্ঠান শেষে রুমে এসে অাবির সেই কাগজের টুকরো বুকে চেপে ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অাজ তার।।অন্যরকম এক শূন্যতায় ছেয়ে গেছে অাবিরের মন। এই কাগজটাই ছিল ঈশিতার ছুঁয়ায় পাওয়া শেষ স্মৃতি।সত্যিই সেই মেয়েটি ছিল ঈশিতা। ধার্মিক পরিবারের মেয়ে ঈশিতা ছিল বোরকা পড়া।তাই অাবির চিনেও চিনতে পারেনি।তারপর ক্লাস, পরীক্ষা একের পর এক চলতে থাকে।।বিশাল বড় চ্যালেন্স অাবিরের সামনে হয় তাকে 1st class 1st হতে হবে নতুবা BCS ক্যাডার।তাই অাবিরও পুরোদমে পড়াশুনা শুরু করে।3rd year final exam শেষ।study tour হবে কক্সবাজার।। বন্ধুদের অাবদার রাখতে এবার tour-এ যাচ্ছে অাবির।6.12.15 সন্ধ্যায় কক্সবাজারেরর উদ্দ্যেশে রওনা হল তারা।বাসে সেই গান।।অনেকদিন পর অাবিরও একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।।সংকৃতিমনা অাবিরের মন এসব যেন ভুলেই গিয়েছিল।।সবার সাথে অাবিরও এইবার নাচতে অার গাইতে লাগল।সবাই যেন নতুন এক অাবিরকে দেখতে পাচ্ছে।।পরদিন দুপুরে তারা পৌঁছে গেলো কক্সবাজার।বিকালে লাবণী বিচে যাবে এই অানন্দে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় দুপুরের খাবার সেড়ে নিলো তারা। সবার খাওয়ার দৃশ্য দেখে হাহাকারের অমানিশায় ছেয়ে গেলো অাবিরের মন।।প্রিয় বান্ধবী, ভালোলাগার মানুষ একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। এমন একটা দিন তো অাবিরেরও পাওয়ার কথা ছিল।রুমে চলে অাসল অাবির।একা একা সমুদ্র দেখবে না সে।নেশা অাবির করে নি কোনদিন।কিন্তু অাজ সে কয়েক প্যাকেট সিগারেট কিনেছে।।এদিকে ঈশিতার বাবা তাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে যেন ছেলেদের সাথে সমুদ্রপারে না যায়।তাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে অবোধ মেয়ের মতো রুমে ফিরে এসেছে।টিভি দেখছে ঈশিতা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা বন্ধুদের তবু ফেরা হল না।।অার ভালো লাগছেনা টিভি দেখতে।।পুরোনো ডায়রিটা ঈশিতা বের করলো কিছু লিখবে বলে।। কিন্তু ডায়রি খুলতেই অাবিরের দেয়া গোলাপের পাপড়িগুুলো ঝড়ে পড়ল ডায়রি থেকে।।অানমনে ঈশিতা বলতে লাগলো কোথায় অাছো অাবির? কেমন অাছো??এইচ. এস.সি পাশ করার পরই ঈশিতারা অাবিরদের এলাকা থেকে চলে অাসে।।ঈশিতা ঠিক করলো ভাপাপিঠার কাগজে লিখে অাবিরকে দেয়া সর্বশেষ কবিতাটাই অাজ সে অাবৃত্তি করবে।রুমের বাতিগুলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিহরণ জাগানো পরিবেশ তৈরি করলো ঈশিতা!! কবিতাটি হল-
০
অনুভবে
তুমি
০
যখন
ভাবি
একলা
রব,
তখন
তুমি
অাসো।
ঘুরে
ফিরে
মনের
মাঝে,
স্বপ্ন
তুমি
অাঁক। যখন
ভাবি
শূন্যমনে, করার
কিছু
নাই।
তখন
অািম
হাত
বাড়িয়ে,
তোমায়
শুধু
পাই।
যখন
ভাবি
এই
অবেলায়,
মেঘ
বৃষ্টির খেলা।
তখন
তুমি
চুপি
চুপি,
ভাবনায়
দাও
দোলা।
যখন
অামি
কষ্ট
পাই,
তখন
তুমি
হাসো।
দূর
হলেও
সেথা
হতে,
গভীর
ভালোবাসো।। ঈশিতার
কবিতাটা বাইরে
থেকে
সিগারেট টানতে
টানতে
শুনছিল
অাবির।।খুব পরিচিত
কন্ঠ।
কে
এই
মেয়ে
জানতেই
হবে।।সাহস করে
অাবির
বলেই
ফেললো
এই
রুমে
কে?ভেতর থেকে ঈশিতার
উত্তর
অামি
সেতু।।
sorry disturb করলাম
এই
বলে
অাবির
চলে
গেলো।কিছুতেই হিসাব
মেলাতে
পারছে
না
অাবির।
এই
কবিতা
ঈশিতার
লিখা।ভাপাপিঠার কাগজের
সাথে
ছুঁড়ে
ফেলা
কাগজে
ঈশিতা
লিখেছিল এই
কবিতা।
কিন্তু
এই
মেয়ে
পেলো
কী
করে??study
tour শেষে
অাবির
ফ্যাকাল্টিতে গিয়ে
সেতু
নামের
মেয়েটির সমস্ত
ডাটা
যোগাড়
করল।
ঈশিতার
বাবা-মার নাম অার
সেতু
নামের
মেয়েটির বাবা
মার
নাম
হুবহু
মিলে
গেছে,ঈশিতার স্কুলের নাম
অার
ঐ
মেয়েটার স্কুলের নামও
এক।তাহলে কি
এই
সেতু
নামের
মেয়েটিই ঈশিতা!!।হাত
পা
কাঁপছে
অাবিরের।ক্রমে এই
শ্বাসরুদ্ধ হয়ে
অাসছে।।কোনমতে দৌড়ে
পৌঁছালো ঈশিতার
হলের
সামনে।কি করবে
ভেবে
পাচ্ছে
না
অাবির।। মনে
পড়ে
গেলো
অাবিরের সাইকেলের কথা।হলের সামনে
তিনবার
রিং
বাজাতেই সেতু
নামের
মেয়েটি
গেটের
সামনে
এসে
হাজির
। এইবার অাবির
নিশ্চিত এই
মেয়েটিই তার
হারিয়ে
যাওয়া
ঈশিতা!!!অাবিরকে দেখে ঈশিতা নিস্তব্ধ নিথর
পাথরের
মতো
হয়ে
গেলো।
যেন
নিজের
চোখকে
বিশ্বাস করতে
পারছে
না।অাবির ঈশিতাকে কাছে
টেনে
নিল।।এতো দিনের
না
পাওয়ার
সব
সুখ
যেন
অাজ
তারা
এক
সাথে
পেলো।


0 comments :
Post a Comment